Skip to content

এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র: এক বাস্তব সম্ভাবনা

যদিও ফিলিস্তিনে ক্ষমতার ভারসাম্য একটি গণতান্ত্রিক সমাধানের পক্ষে নেই এবং কোনো বড় সংস্থা কিংবা দল এই সমাধানের পক্ষে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে না, উক্ত পরিস্থিতি পাল্টাতে বাধ্য।

ফিলিস্তিনি পক্ষে, বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ওডিএস দৃষ্টিতে পরিবর্তন আনা খুব প্রয়োজনীয়। দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাবের সুস্পষ্ট ব্যর্থতা, ফিলিস্তিনি নেতৃত্বে বিভিন্ন দিক থেকে অসফলতা (যেমন- ভয়াবহ দুর্নীতি ও বৈদেশিক ক্ষমতার পরাধীনতা) এখন বহুসংখ্যক ফিলিস্তিনিদেরকে নদী হতে সাগর পর্যন্ত এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র স্থাপনার ঐতিহ্যবাহী ডাকে উৎসাহিত করছে। সফলতার সম্ভাবনা আছে, এবং সেজন্য প্রয়োজন এই রাজনৈতিক দৃষ্টিসম্পন্ন সুসংগঠিত ফিলিস্তিনি আন্দোলন প্রতিষ্ঠা (প্রকৃতপক্ষে, পুনঃপ্রতিষ্ঠা) করা।

ইসরাইলি পক্ষের বিষয়টি আরো একটু জটিল, কেননা ইসরাইলি রাষ্ট্র ও সমাজ হচ্ছে ইহুদিবাদের ফলাফল ও মূল লক্ষ্য, ওডিএস যার মৌলিক বৈপরীত্য। আমরা ইহুদিবাদকে গণতন্ত্রে রূপান্তরিত হতে আশা করতে পারি না, এবং আমরা এরূপ কোনো ঘটনার জন্য অপেক্ষাও করছি না: গণতন্ত্রের সাফল্যই ইহুদিবাদের মতো বর্ণবাদী ও উপনিবেশিক মতবাদের পরাজয় তুলে ধরবে। যদিও ক্ষমতার ভারসাম্য এখনো ইহুদিবাদের পক্ষে, তিনটি বিষয় এটিকে গণতন্ত্রের পক্ষে ঠেলে দিতে পারে:

প্রথমটি হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের অবিরাম সশস্ত্র ও নিরস্ত্র সংগ্রাম, যেটি ইহুদিবাদের ঔপনিবেশিকদের জন্য “জনগণ ছাড়া একটি ভূমি” ও “নিরাপদ আবাসন” প্রদানের দাবিকে মিথ্যাচার হিসেবে বহিঃপ্রকাশ করছে।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে ফ্যাসিবাদে ইসরাইলের অধঃপতন ও ফিলিস্তিনবাদী কার্যক্রমের ফলে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক চাপ – যা ইন্সটিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ দ্বারা “ইসরাইলের সর্বোচ্চ হুমকি” হিসেবে আখ্যায়িত।

তৃতীয়টি হচ্ছে ইহুদিবাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। ব্যক্তিপরিচয়কে রাজনৈতিক ধরে এমন এক মতবাদ হিসেবে ইহুদিবাদ তার লক্ষ্য সমাজ এবং নিজের সমাজকে বিভক্ত করে ফেলে এবং:

  • অন্য রাষ্ট্রের ইহুদি নাগরিকদেরকে ইসরাইলি সমাজের ও রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে দাবি করে, ফলে তাদেরকে নিজেদের সমাজ ও দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে – অতঃপর ইহুদিবাদ নিজেই ইহুদি-বিরোধিতায় জড়িয়ে পড়ে।
  • “ইসরাইলি সংস্কৃতি” কে একমাত্র ইহুদি সংস্কৃতি হিসেবে তুলে ধরে, ফলে ইহুদিবাদ নিজেই বিভিন্ন ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন্দল ও মোহমুক্তির উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন- নন-ইসরাইলি ইহুদি সংস্কৃতিকে ছোট করে দেখা (য়িদিশ ভাষা পরিত্যাগ করে হিব্রু ভাষার প্রচলন) অথবা, ইহুদি কল্যাণের উদ্দেশ্যে গ্রহীত ভাতা ইহুদিদের জন্য ব্যয় না করে ইসরাইলে চালান করা। এটা নন-ইসরাইলি ইহুদিদের মাঝে ইসরাইলের সমর্থন ক্ষীণ হওয়ার একটি বড় কারণ।
  • যে সকল রাজনৈতিক আন্দোলন পরিচয়ের রাজনীতিকরণে লিপ্ত, তারা সকলেই উক্ত পরিচয় কি তা নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়। যেমন- ইসরাইল নাৎসিদেরকে “ইহুদি”র স্বীকৃতি দিয়ে ফিলিস্তিনে এনেছে এবং প্রকৃত ইহুদিদের ইহুদিত্বে সন্দেহ পোষণ করে তাদের নাগরিক প্রদানে অস্বীকার হয়েছে। বর্তমান ইসরাইলি সরকার তাওরাতের পাশাপাশি ইঞ্জিলে বিশ্বাস করে এমন জনগণকে “ইহুদি” হিসেবে মানতে রাজি নয় অথচ যারা তাওরাতে বিশ্বাসই করে না এমন জনগণকে “ইহুদি” হিসেবে মেনে নিয়েছে। “কে একজন ইহুদি” প্রশ্নটির বর্তমান পুনঃসংজ্ঞার প্রস্তাব ইসরাইলকে বিশ্বের ৭০ ভাগ ইহুদিদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে।
  • পরিচয় একটি সামাজিক সৃষ্টি, তাই পরিচয়বাদী দলগুলো সমাজের কোনো শ্রেণির মধ্যে পড়ে না (যেমন- শিল্পপতি, কৃষক, ছাত্র, ধনী-দরিদ্র ইত্যাদি)। সমাজের পরিচয়বাদী বিভাজন তাই নাগরিকদের বা সমাজের কোনো শ্রেণির চাহিদা পূরণে সক্ষম নয়। ফলে এমন রাজনৈতিক আন্দোলন, আলোচনা, বিতর্ক ও নীতির প্রণয়ন হয় যার সাথে সমাজের চাহিদার কোনো মিল নেই এবং “অন্য পক্ষের” সাথে অমিলের দিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ইসরাইলের ক্ষেত্রে, তার নাগরিকদের মাঝে বিশাল আর্থ-সামাজিক বিচ্ছেদ ও ডান-পন্থীর দিকে অগ্রসর হওয়ার ফলে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। এসব কারণে ইসরাইলি ভাতা ও ফিলিস্তিনের নাগরিকদের বহিরাগমন দেখা দিচ্ছে, তাই ‘ব্যাংক অব ইসরাইল’ প্রধান কর্মকর্তা সতর্কবার্তা দিয়েছে “যেকোনো মুহুর্তে একটি অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে”।
  • পরিচয়, সংজ্ঞামতেই আমাদেরকে একে অপরের থেকে পৃথক করে। ইহার রাজনীতিকরণ শুধু জনগোষ্ঠীতেই থেমে থাকে না, বরং আরও ক্ষুদ্রতর পরিচয়ের সৃষ্টি করে সমাজকে আরও বিভাজিত করে। এক পর্যায়ে এটি প্রথম পরিচয়বাদী জনগোষ্ঠীকে ভেঙে সমাজকে হয়তো হিংস্রভাবে আরও বেশি বিভাজিত করে। বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, যখন আধিপত্য/একজাতীয়তা কোনো পরিচয়বাদী দলের দ্বারা অর্জিত হয়। কেননা তখন এই পরিচয়কে ধরে রাখার মতো এর কোনো নির্দিষ্ট দিক-বৈশিষ্ট্য থাকে না। এসব কারণে বিভিন্ন অন্তঃইসরাইলি দলের মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দিচ্ছে যেমন- ধার্মিক ও অধার্মিক, ধর্মতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ, সমকামী ও সমকামী-বিরোধী, রাশিয়ান ও ইউক্রেনিয়ান, আশকেনাজি ও মিজরাহিম, ইউরোপীয় ও আফ্রিকান, ইত্যাদি। বেনি গান্টজের কথায়, “ইসরাইলি গৃহযুদ্ধ এখন এমন একটা সম্ভাবনা যেটি ইসরাইলের মোকাবিলা করতে হবে”।

ইহুদিবাদ আমাদের জীবনকালেই ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই বলে এটি কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকটি নিশ্চিত করে না। ইহুদিবাদের অধঃপতনের কারণে বিশৃঙ্খলা, বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক হানাহানি কিংবা একটি স্বৈরাচারী আরব রাষ্ট্র বা উগ্রবাদী ইসলামী রাষ্ট্রের সূত্রপাত ঘটতে পারে। তাই আমাদের প্রয়োজন শুধু ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন নয়, আরও প্রয়োজন একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া: নদী হতে সাগর পর্যন্ত, এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করা।

এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উদ্যোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনের ভিতরে ও বাইরে জনগণ, সংস্থা ও রাজনৈতিক দলসমূহকে এরূপ কর্মসূচিতে উদ্বুদ্ধ করা। এটিকে বাস্তবায়নের জন্য আপনাকে এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সমাধানের সমর্থক হিসেবে নিবন্ধন করার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।

নিবন্ধন করে এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি আপনার সমর্থন জানান।